সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি: বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা চরের কৃষকেরা গাইঞ্জাধান মাড়াই করতে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। অসময়ে বন্যা এবং অন্যান্য ফসলে লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন কমছে এ ধানের আবাদ।
উপজেলার যমুনা এবং বাঙালি নদীতে বন্যার পর পরই পলিমাটি পরে। আর এসব পলিমাটিতে কোনরুপ চাষ ছাড়াই কৃষকরা স্থানীয় জাতের আমন ধান চাষ করেন। যা আদিকাল থেকেই গাইঞ্জাধান নামে পরিচিত। গাইঞ্জাধানের বিশেষত্ব হচ্ছে, এটি রোপনের পরে কোনরূপ পানিসেচের প্রয়োজন হয় না, কোনও রাসায়নিক সার প্রয়োগেরও প্রয়োজন হয়না, এ ধানের চাল বেশ সরু, তাই সম্পূর্ণ অর্গানিক ধান হওয়ায় এর ভাত খেতে খুবই সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যসম্মত । আর তাই চরাঞ্চলের কৃষকেরা আদিকাল থেকেই এ ধানের চাষ করেন। এছাড়া এ ধানের ভাত তারা সারাবছর তারা খেয়ে থাকেন। তবে সারাবছর খাওয়ার পর অতিরিক্ত ধান তারা বাজারে বিক্রিও করেন। আর তাইতো এখন উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে গাইঞ্জাধান উঠতে শুরু করেছে। উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলে এখন কৃষকরা গাইঞ্জাধান কর্তন, পরিবহন করে নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া এবং বাড়িতে এ ধান মাড়াই করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বাড়ির কৃষানীরাও এ ধান সিদ্ধ করে তা রোদে শুকিয়ে গোলাজাত করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে দিনদিন এ উপজেলায় গাইঞ্জাধানের আবাদ কমতে শুরু করেছে। এ বছর গাইঞ্জাধান চাষের জন্য বন্যার পর কোনও বিশালাকার পলিমাটির জমি সৃষ্টি হয়নি। তাছাড়া যখন জমিতে গাইঞ্জাধান লাগানো হয় ঠিক সেই অসময়ে এবছর বন্যা হয়। সেই অসময়ের বন্যায় কৃষকদের রোপণ করা ধানের চারাগুলো পানিতে আক্রান্ত হয়ে নষ্ট হয়েছে। তবে যেসব জমির গাইঞ্জাধান অক্ষত ছিল সেখানে খুবই ভালো ফলন হয়েছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের পারতিতপরল গ্রামের কৃষক রঞ্জু মিয়া বলেন, সদর ইউনিয়নের নিজতিতপরল মৌজায় জেগে ওঠা চরের ১৫ বিঘা জমিতে গাইঞ্জাধানের আবাদ করেছিলাম। তার মধ্যে ১০ বিঘা জমির গাইঞ্জাধান অসময়ের বন্যায় নষ্ট হয়েছে। বাঁকি জমির ধান কর্তন করেছি এবং সেখানে পিঁয়াজ চাষ করছি। এ বছর বিঘাপ্রতি ৭ মণ করে ধান পেয়েছি। গাইঞ্জাধানের ভাত অত্যন্ত সুস্বাদু খাবার। এ ধানের ভাতের সাথে মাসকলাই এর ডাল আর আলুভর্তা হলে আর কিছুই লাগে না। বর্তমানে বিভিন্ন জাতের উচ্চ ফলনশীল জাতের ধানের তুলনায় এ জাতের ধানের ফলন একটু কম হয়। তাই অনেকেই গাইঞ্জাধান চাষ করা ছেড়ে দিচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি কৃষি অফিসের তথ্য অনুযায়ী গত এক বছর আগেও সারিয়াকান্দিতে গাইঞ্জা ধানের আবাদ হয়েছিল ২৭'শ হেক্টর। গত বছর যা কমে ১৮'শ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছিল। এ বছরও গাইঞ্জাধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৮'শ হেক্টর। কিন্তু মাত্র ১৪,শ হেক্টর জমিতে গাইঞ্জাধানের আবাদ হয়েছে। বাজারে প্রতিমণ গাইঞ্জাধান ১৬০০ টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি বিঘা জমিতে কৃষকরা ৫ থেকে ৭ মণ পর্যন্ত এ ধানের ফলন পাচ্ছেন।
সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, চরাঞ্চলের কৃষকরা সাধারণত মরিচ, ভুট্টা, মিষ্টিকুমড়াসহ নানা ধরনের অর্থকারী ফসলের দিকে ঝুঁকে পরছেন। তাছাড়া এ বছর বন্যা কম হওয়ায় গাইঞ্জাচাষের জন্য কাঙ্ক্ষিত পলিমাটির জমি সৃষ্টি হয়নি। তাই গাইঞ্জাধানের আবাদ কম হচ্ছে। তবে যেটুকু জমিতে আবাদ হয়েছে, সেই জমিতে বেশ ভালো ফলন হয়েছে এবং কৃষকরা উচ্চ মূল্যে বাজারে বিক্রি করে বেশ লাভবান হচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment