আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমায় দেশেও এলপিজির (তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) দাম কমেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার প্রতি ১০০ টাকা কমিয়ে ৬০০ টাকা করেছে। বেসরকারি কোম্পানির এলপিজি সাড়ে ৯০০ থেকে কমে সাড়ে ৮০০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে এখন। দাম কমায় এই সুফল আরও কিছুদিন পাবেন গ্রাহকরা। তবে দাম কমা নিয়ে খুশি হলেও সরকারি ও বেসরকারি দামের পার্থক্য কমানো এবং নির্দিষ্ট দামের নীতিমালা প্রণয়নের দাবি জানিয়েছেন গ্রাহকরা।রাজধানীর এলপিজি সিলিন্ডার বিক্রেতারা জানান, গত মাসে বসুন্ধরা, জি-গ্যাসের এলপি গ্যাস বিক্রি করেছেন ১১০০ থেকে ১০৫০ টাকায়। চলতি মাসে সেটি কমে হয়েছে ৯৫০ টাকা। তবে সেনাকল্যাণ ট্রাস্টের গ্যাস এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকা।এদিকে, মেঘনা গ্রুপের গ্যাস ফ্রেশ এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫০ টাকায়। যা গত মাসেও ছিল ৯৫০ টাকা। তবে সিলিন্ডারসহ এই গ্যাসের দাম পড়ছে এখন এক হাজার ৩০০ টাকা। গত মাসে এর দাম ছিল ১৪০০-১৫০০ টাকা।
গ্যাস ব্যবহারকারীরা জানান, দাম কমায় এতে সুবিধা হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একেক কোম্পানির সিলিন্ডারের একেক রকম দাম হওয়ায় মাঝে মধ্যে বিড়ম্বনায় পড়ি। সব সেবার মতো সব কোম্পানির এলপিজির দামও যদি এক হতো তাহলে গ্রাহকদের সুবিধা হতো বেশি।
একইভাবে ঢাকার বাইরে থেকেও অনেকে জানিয়েছেন এলপি গ্যাসের দাম কমায় তারা খুশি। ঝিনাইদহের এক গ্রাহক জানান, যেখানে আগে ৮০০-৮৫০ টাকায় গ্যাস কিনতে হতো, এখন তা কমে হয়েছে ৭৩০ টাকা। প্রায় একই ধরনের তথ্য দিয়েছেন ফরিদপুরের বাসিন্দা মিজানুর রহমান। তিনি জানান, সেখানে লাফার্স কোম্পানির ১২ কেজির সিলিন্ডার এখন বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকায়। আগে যা ৮৫০ টাকা বিক্রি হতো।
এ তো গেলো বেসরকারি কোম্পানিগুলোর গ্যাসের দাম। দাম কমানো হয়েছে সরকারি কোম্পানি বিপিসির এলপি গ্যাসেরও। যা বেসরকারিগুলোর তুলনায় আরও বেশি কমেছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, বিপিসি নির্দিষ্ট দামে গ্যাস বিক্রি করলেও বেসরকারি কোম্পানিগুলো নিজেদের ইচ্ছেমতো দামে তা বিক্রি করে। দামের কোনও নীতিমালা না থাকা এবং সরকারি নিয়ন্ত্রণ না থাকাতেই এ সমস্যা হচ্ছে।
তবে শিগগিরই সবার দাম এক হবে। এজন্য নীতিমালা তৈরি করা হচ্ছে বলে জানান বেসরকারি এলপিজি বিক্রেতা সংগঠনের নেতারা।
বিপিসির এলপি গ্যাসের দাম কমার বিষয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, বিশ্ব বাজারে কাঁচামালের দাম কমায় সরকারি এলপিজির দাম সিলিন্ডার প্রতি ১০০ টাকা কমেছে। এখন বাজারে ৬০০ টাকায় ১২ কেজির সরকারি এলপিজির সিলিন্ডার পাওয়া যাচ্ছে।
এদিকে দামের বিষয়ে ওমেরা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডের পরিচালক এবং এলপিজি অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (লোয়াব) সভাপতি আজম জে চৌধুরী বলেন, কাঁচামালের দাম কমায় আমরা দাম কমিয়েছি। যদিও বিশ্ববাজারে আবারও দাম বাড়তে শুরু করেছে। কিন্তু আমরা গ্রাহকদের জন্য এই দাম আপাতত বাড়াবো না।
সরকারি ও বেসরকারি কোম্পানিগুলোর দাম আলাদা হবার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা বিইআরসির সঙ্গে বসে একটি নির্দিষ্ট দাম ঠিক করবো, যাতে সব কোম্পানি ওই দামে বিক্রি করে, সেই নীতিমালা নিয়ে কাজ করছি। এই নীতিমালা হলে সিলিন্ডারের গায়ে এমআরপি দেওয়া থাকবে। ফলে তখন গ্রাহকের ভোগান্তি আর থাকবে না।
তিনি আরও বলেন, পাইপলাইনের তুলনায় এই গ্যাসের বাজার এখনও নতুন। তাই নিয়ন্ত্রণ করতে কিছুটা সময় তো দিতে হবে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে জ্বালানি বিভাগ জানায়, চলতি বছর এলপিজির চাহিদা প্রায় ৭ লাখ ১৩ হাজার টন। যার মধ্যে মাত্র বছরে ২০ হাজার টন উৎপাদন সক্ষম সরকারি এলপিজি কোম্পানি। বাকিটুকু যমুনা, বসুন্ধরা, ওরিয়ন, ওমেরা, নাভানা, ক্লিনহিট, টোটাল, পেট্রোম্যাক্স, লাফার্স, জি-গ্যাস, ডেলটা নামে বেসরকারি কোম্পানি বাজারজাত করছে।
২০৪১ সালে এলপিজির চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, গত কয়েক বছরে এলপিজির ব্যবহার অনেক বেড়েছে। এ পর্যন্ত এলপিজি ব্যবসায় ৫৬টি কোম্পানিকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। এর মধ্যে ১৮টি কোম্পানি এখন উৎপাদনে রয়েছে।
No comments:
Post a Comment