সুমন কুমার সাহা, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে বৃহস্পতিবার বিকাল ৬ টায় যমুনা নদীর পানি বিপদসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ফলে যমুনার চরাঞ্চলের বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে এবং ৪০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। পানিবন্দী এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে স্থানীয় প্রশাসন। ৫৩০ হেক্টর জমির ফসল পানিতে আক্রান্ত।
এদিন সকাল ৬ টায় এ নদীর পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৩৭ মিটার। বিকাল ৬ টায় পানির উচ্চতা হয়েছে ১৬.৬৩ মিটার। অর্থাৎ ১২ ঘন্টায় পানি ২৬ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানির বিপৎসীমা ১৬.২৫ মিটার। তাই পানি বিপৎসীমার ৩৮ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এদিকে পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার ১২ টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার ৭৫ টি গ্রামের ১১২ বর্গকিলোমিটার এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে ১১ হাজার ৯৭০ টি পরিবারের ৪১ হাজার ৩৭০ জন মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। ফলে উপজেলার ৫৮ টি বাড়ি সম্পূর্ণ এবং ১৯০ টি বাড়ীঘর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যায় ১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং ৫০ টি কাঁচা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় এ উপজেলার ৫৩০ হেক্টর ফসলি জমি পানিতে আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে শুধুমাত্র পাটগাছই আক্রান্ত হয়েছে ৪৩০ হেক্টর জমির। এতে উপজেলার ২ হাজার ৮৬০ টি কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে উপজেলার ১ হাজার ৫০ টি নলকূপ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। দ্রুত পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় উপজেলার ১৪ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়েছে। বিষয়গুলো নিশ্চিত করেছে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন। পানিবন্দী হওয়ায় উপজেলার বন্যা কবলিত মানুষরা তাদের বসতভিটার উঁচু ঢিবিতে মাচা পেতে বসবাস করছেন, কেউবা আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান নিচ্ছেন। এছাড়া উপজেলার বন্যায় আক্রান্ত এলাকাবাসী বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে বেশকিছু মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা রান্না করতে না পারায় খাবার কষ্টে রয়েছেন এবং তাদের বসতভিটা ডুবে যাওয়ার কারণে তারা পয়ঃনিষ্কাশন জনিত সমস্যায় ভুগছেন। এদিকে উপজেলার যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দী হয়েছে, সেইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শ্রেণির কার্যক্রম অন্যত্র চালানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের চর শালুকা গ্রামের আলমগীর হোসেন বলেন, রাতের মধ্যেই হঠাৎ করেই ঘরের মেঝেতে একহাঁটু পানি হয়ে যায় এবং বাড়ির বাইরে একবুক পানি হয়। বাথরুম, টিউবওয়েল, চুলাসহ সবকিছুই ডুবে গেছে। সকাল থেকেই না খেয়ে ছিলাম, তবে দুপুরের দিকে স্থানীয় মেম্বার কিছু শুকনা খাবার দিয়ে গেছে।
সারিয়াকান্দি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ তৌহিদুর রহমান বলেন, বন্যার জন্য এ উপজেলার মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। এ উপজেলার একটি মানুষও যাতে না খেয়ে থাকে, তার জন্য সকল ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। ইতিমধ্যেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে, কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে, বন্যা মোকাবেলায় প্রস্তুতি সভা করা হয়েছে এবং ৬ টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment