সুমন কুমার সাহা, সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধিঃ শীতের কুয়াশা ভেজা সকাল ও সন্ধ্যায় পিঠার আয়োজন বহুকাল আগে থেকেই ঐতিহ্যগতভাবেই রয়েছে। কিন্তু ডিজিটাল যুগে নানা ব্যস্ততার কারণে ইচ্ছে থাকলেও এখন অনেকেই ঘরে ঘরে শীতের পিঠা বানিয়ে খেতে পারে না। বাড়িতে পিঠা তৈরির ঝামেলা এড়াতে অনেকেই পিঠার দোকান থেকে পিঠা ক্রয় করে স্বাদ মিটাচ্ছে। তাই বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় রাস্তার মোড়ে মোড়ে জমে ওঠেছে শীতের পিঠার দোকান।
তেমনি পৌর এলাকার কালিতলা বাঁধে শীতের পিঠা বিক্রি করে চলে মর্জিনার সংসার । মর্জিনা (৬০) পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ড নিজবাটিয়ার মৃত নায়েব আলী মন্ডলের স্ত্রী। তার ১ ছেলে ১ মেয়ে। এক মাত্র ছেলের ঘরে ভাত না জুটলেও অভাব-অনটনে কন্যার সংসার স্থায় মিলেছে। অবশেষে মা- মেয়ে দুজনে মিলে শুরু করে কালিতলা গ্রেয়েন বাঁধে শীতের ভাপা পিঠা বিক্রি। প্রায় দীর্ঘ ৩-৪ বছর ধরে শীতের পিঠা বিক্রি করে কোন রকম চলছে তাদের সংসার।
শুধু মর্জিনায় নয়, এই উপজেলায় তাদের মতো অর্ধশতাধিক নারী –পুরুষের সংসার চলছে শীতের বিভিন্ন সুস্বাদু পিঠা বিক্রি করে।
সকাল ও সন্ধ্যার পরে এক প্রকার সিরিয়াল দিয়ে পিঠা কিনতে হয়। রাস্তার দোকানের পাশে দাঁড়িয়ে অনেককেই দেখা যায় পিঠা খেতে। আর শীতের পিঠা খাওয়ার তৃপ্তি মেটাতে গিয়ে সারিয়াকান্দির অর্ধশতাধিক পরিবারের উপার্জন হচ্ছে এখান থেকেই। যা দিয়ে চলছে তাদের সংসার।
কালিতলা এলাকার পিঠা বিক্রি করা মর্জিনা জানান, গুড় ও চালের দিয়ে তৈরি ভাপা পিঠা। । এ বছর শীতে গত ১৫ দিন ধরে পিঠা বিক্রি করছেন। যা চলবে শীতের দুই মাসের মতো । শীত এখনো পুরো দমে না পরায় বিক্রি খুব কম। ভাপা তৈরি উপকরণ খরচা ৬০ টাকা কেজি চাল, চাল থেকে আঁটা তৈরি করতে প্রতি কেজি ১০ টাকা, গুর ১২০ টাকা কেজি । মর্জিনা বেগম প্রতিদিন ৪ কেজির চালের আঁটার আঁধা কেজি গুরের ভাপা পিঠা তৈরি করছেন । যার মোট খরচ ৩৫০ টাকা। ৪ কেজির চালের অনুমানিক ১শত পিচের মতো পিঠা হয় । যা পাঁচ টাকা পিচ বিক্রি করে ৫'শ টাকার মত হয়। তাতে এখন ১৫০ টাকা আয় হয়। একটু বেশি বিক্রি হলে ২০০- ২৫০ টাকা থাকে। নিজে যমুনার চর থেকে বিনা মূল্যে জ্বালানি সংগ্রহের জন্য একটু সাশ্রয়ী হচ্ছেন।
একই এলাকার লাইলি বেগম বলেন, আমার স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়েন আছে। সে কোন কাজ করতে পারেনা । সংসার চালাতে এই পিঠা তৈরি করে বিক্রি করি । এই আয় দিয়ে কোন রকম দিন পার করছি। মাটি কাটা কাজের জন্য ইউএনও এর কাছে গিয়েছিলাম। সেই কাজটিও এখন নাকি বন্ধ রয়েছে। একটা কাজ পেলে হয়তো আমার সংসার ভালভাবে চলতো। একটা কাজ না পাওয়া পর্যন্ত ভাপা পিঠা বিক্রি করবো।
No comments:
Post a Comment