সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ
সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি ঃ বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রিপ্রেজেনটেটিভদের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ। অনেক দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা এসে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে সেবা নিতে যান। চিকিৎসকের কক্ষ থেকে রোগী বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একদল রিপ্রেজেনটেটিভ দৌড়ে এসে রুগীর কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন নেন। সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোন দিয়ে ছবি তুলে নেন।
এর ফলে রোগী ও তার আত্মীয়স্বজন চরম দুর্ভোগে পড়েন। তারা প্রতিটি হাসপাতালে রাজ্য করে বেড়াচ্ছেন। রোগী কিংবা রোগীর সঙ্গের লোকেরা খুবই বিরক্ত এতে। তাদের যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ মানুষ । এইটা একধরনের হয়রানি বলছেন জনসাধারণ ।
এই চিত্র শুধু সারিয়াকান্দি হাসপাতালের নয়; সারা দেশের প্রতিটি জেলা উপজেলায় যতগুলো সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল রয়েছে, সব জায়গায় একই দৃশ্য প্রতিদিন দেখা যাচ্ছে।
এব্যাপারে ভুক্তভোগী বিভুতি পাল বলেন, আমি প্রায় সারিয়াকান্দি হাসপাতালের চিকিৎসা নিতে আসি । ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথে ঔষধ কোম্পানীর লোকজন ঘিরে ধরে প্রেসক্রিপশন চায়। তারা ১ জন ২ জন তো না ১০ থেকে ১২ জন । প্রেসক্রিপশন দেয়ার সাথে সাথে এই ১০/ ১২ জন প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে কারা কারি লেগে যায়। এতে আমি বিরক্ত হই ।
সাহাপাড়ার সেতু রানী বলেন, এই হাসপাতালে দীর্ঘ লাইন ধরে অনেক সময় ব্যয় করে টিকিট সংগ্রহ করে ডাক্তার দেখাতে হয়। ডাক্তারের কাছ থেকে প্রেসক্রিপশন করে বাহিরে এলেই এক দল রিপ্রেজেনটেটিভ প্রেসক্রিপশন চান । আমি কোনো সময় তাদের কে প্রেসক্রিপশন দেখাই না। এই বিষয়ে আমি বিরক্ত বোধ করি। এসব বন্ধ হওয়ার দরকার।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে একজন ব্যবসায়ী অরুপ সাহা জানান, সকাল ১০ টা বাজতেই রিপ্রেজেনটেটিভরা দোকানের সামনে জড়ো হতে শুরু করে। এতে নানান সমস্যা তৈরি হচ্ছে। তাদের এই হেনস্তার শেষ কোথায়?
এবিষয়ে সচেতন ব্যক্তি কবি সোহরাব হোসেন (মাস্টার) জানান , আমরা যদি পাশের দেশ ভারতের দিকে খেয়াল করি, ওদের নিয়ম-নীতি রয়েছে। কোনো চিকিৎসক যদি ভুলক্রমেও সেলস রিপ্রেজেনটেটিভদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখে দেন, তাহলে চিকিৎসকের সার্টিফিকেট কিছু মাসের জন্য বাজেয়াপ্ত করা হয়। পরবর্তী সময়ে ভারতে এ ধরনের কাজ আর লক্ষ করা যায় না। বাংলাদেশেও এমন আইন করার দাবি করছি। শুধু চিকিৎসকদের প্রতি আইনের প্রয়োগ নয়। ঐ ওষুধ কোম্পানিগুলোকেও আইনের আওতায় আনতে হবে, যাদের হাতে চিকিৎসকরা জিম্মি হয়ে আছেন। তাদের প্রতি কঠোর আইন প্রয়োগ করা হলেই কেবল এই দুর্দশার মুক্তি মিলবে। দেশের মানুষ সঠিক ও সুন্দরভাবে চিকিৎসাসেবা নিতে পারবে।
একজন পরিচয় প্রকাশ না করা রিপ্রেজেন্টেটিভদের ভাষ্য হলো, ‘আমরা সেলস বিভাগে কাজ করি। অফিস থেকে বিভিন্ন টার্গেট দেওয়া থাকে। নানা সময়ে চিকিৎসকদের নানা ধরনের সুবিধা ও উপহার দিয়ে থাকি। আমাদের কোম্পানির ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখলে বিশেষ উপহারের ব্যবস্থা করা হয়ে থাকে চিকিৎসকদের জন্য। আমরা হাসপাতাল চত্বরে, পল্লী চিকিৎসককে চেম্বারের দাঁড়িয়ে থাকি, চিকিৎসকেরা আমাদের ওষুধ প্রেসক্রিপশনে লিখছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। বিষয়টি সম্পর্কে চিকিৎসকেরাও অবগত আছেন। এখানে চিকিৎসকেরাও একরকম ফেঁসে গেছেন। তাদের বাধ্য করা হচ্ছে এসব কাজে। যদিও তারা এসব করে সুবিধাও নিচ্ছেন।
No comments:
Post a Comment